ইতিহাসের পাতায় লেখা ক্ষুদিরাম বসুর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের বাইরে কিছু তথ্য তুলে ধরলেন লেখক- সৌম্যশ্রী পাল সহ শিক্ষিকা (বাংলা)।
বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুকে তো তোমরা সবাই চেনো। এটাও জানো যে ব্রিটিশ বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড এর গাড়িকে উদ্দেশ্য করে প্রফুল্ল চাকী ও তিনি বোমা ছুড়েছিলেন।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই গাড়িতে কিংসফোর্ড না থাকায় এবং তার পরিবর্তে দুজন ব্রিটিশ মহিলা কেনেডি ও তার কন্যা থাকায় তাদের মৃত্যু হয়। আর এই ঘটনার অপরাধে ফাঁসি হয় ক্ষুদিরাম বসুর।এসব তথ্য তোমরা যে কোন ইতিহাসের বইতেই পেয়ে থাকবে।কিন্তু এমন কিছু তথ্য আজ আমি দিতে চলেছি যা কোন ইতিহাস বইতেই খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
১) ক্ষুদিরাম বসুর নামের পেছনের কাহিনী :তিন মেয়ের পর মায়ের চতুর্থ সন্তান ক্ষুদিরাম। দুই ছেলে অকালে মৃত্যুবরণ করেন,তাই ছোট ছেলের মৃত্যুর আশঙ্কায় লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে তাঁর বড় দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। কারণ সেই সময় বাংলা সংস্কৃতিতে একটি প্রথা প্রচলিত ছিল, যেখানে একটি নবজাতককে প্রতিকীভাবে মায়ের বড় বোনের কাছে তিন মুঠো শস্যের বিনিময়ে বিক্রি করা হতো এবং এতে নবজাতক অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পেত । খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে পরবর্তী সময়ে ক্ষুদিরাম নাম রাখা হয়।
২)ক্ষুদিরামের হাতের জোরের পরীক্ষা : স্কুলের শিক্ষক একবার ছাত্রদের হাতের জোর পরীক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন। সকল ছাত্রকে টেবিলে ঘুষি মারতে বললেন। অন্যান্য ছাত্ররা সাত আটটা ঘুষি মেরেই হাতের ব্যথায় কাতর হয়ে উঠল। কিন্তু ক্ষুদিরাম এগিয়ে এসে টেবিল কাঁপিয়ে ঘুষি মারতে শুরু করে হাতের মুঠো ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে।পরে শিক্ষক এগিয়ে এসে ক্ষুদিরামের হাত আগলে ধরে তাকে ক্ষান্ত করে।
৩) ক্ষুদিরামের নেশা :ক্ষুদিরামে ডিটেকটিভ বই পড়ার নেশা ছিল।তখনকার দিনের বিখ্যাত গোয়েন্দা গল্পের লেখক পাঁচকড়ি দে’ র গল্প তাঁর খুব প্রিয় ছিল। অন্যদিকে তিনি ভালো বাঁশিও বাজাতে পারতেন।
৪) ক্ষুদিরামের সাহস : একদিন স্কুলের এক ছাত্রকে স্কুলের গেটে খাবার বিক্রি করতে আসা এক ফেরিওয়ালা ভীষণভাবে অপমান করে। তার অপরাধ ছিল এই যে, খাবার কেনার পর সে ফাউ হিসেবে একটু বেশি চেয়েছিল। কথাটি ক্ষুদিরামের কানে গেলে সে টিফিন শেষে ফেরিওয়ালার ঝাঁকায় সজোরে এক লাথি মারে। সব খাবার মাটিতে পড়ে যায়। ফেরিওয়ালা নালিশ জনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে।ক্ষুদিরামের ডাক পড়লে সে একটুও ভয় না পেয়ে সমস্ত সত্যি ঘটনা প্রধান শিক্ষক মহাশয় কে জানায়। শিক্ষক মহাশয় বকাবকি করলেও অবাক হয়েছিলেন ওইটুকু বালকের সততা এবং স্পষ্টবাদিতায়।
৫) ফাঁসির রায় শোনার পর ক্ষুদিরামের সর্বশেষ ইচ্ছা : ফাঁসির রায় শোনাবার পর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কি তার শেষ ইচ্ছা, ক্ষুদিরাম দৃঢ়কন্ঠে বলেছিলেন, তিনি দেশের মানুষকে বোমা বানানো শিখিয়ে যেতে চান।