খেলতে গিয়ে, অর্ক আর শায়ন, দুর্ঘটনাক্রমে টাইম ট্রাভেল করে ১৯ ৫২ সালে পৌঁছে যায়। তারপর কি হয়? কলমে : ব্রততী দাস
ঐ বল খেলার মাঠের পেছনটায় কিছু তো একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। অর্ক শুনেছে যেখানে যেতে যত মানা, সেখানেই আছে তত বেশি রহস্য।
রোজ বিকেলে খেলতে যাবার সময় মা বলবেই ওদিকটায় একদম যাবিনা কিন্তু।
কিছুদিন হল এটাই যেন চিন্তার একমাত্র বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরদিন স্কুলে গিয়ে শায়নের সাথে এই নিয়ে আলোচনাটা সেরে ফেলতে হবে।
মাঠের পেছনের রহস্য উদঘাটনের মাষ্টার প্ল্যান সেদিনই তৈরি হয়ে গেল ক্লাস সিক্সের ঘরে বসেই।
গ্রামের লোকেরা মাঠের পেছনটা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে অন্য কারনে। কোন এক সময় ঐ বট গাছে একের পর এক ফাঁসীর ঘটনা ঘটেছিল। তারপর থেকে ঐদিকে ভুলেও কেউ যায়না। তবে তা বহু বছর আগের কথা। কিন্তু যা হয় আর কি, বছরের পর বছর ধরে লোকমুখে প্রচলিত কথা গুলো এখন ধ্রুবসত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“শোন কাল একটু তাড়াতাড়ি মাঠে চলে আসবি মনে আছে তো?” -অর্ক আরেকবার শায়নকে মনে করিয়ে দিল।
“কিরে কখন থেকে বসে আছি তুই তো দেরি করে এলি।” -অর্ককে আসতে দেখে শায়ন একটু রাগের সুরেই বলল।
“আরে না না মাকে সব বুঝিয়ে আসতে হল তো তাই একটু দেরি হল রে। শোন আমি কিন্তু বলে এসেছি আজ স্যার তোর বাড়িতে পড়াবে। তাই খেলা শেষে একবারে পড়ে বাড়ি ফিরব। এখন আর দেরি হলেও চিন্তা নেই। চল এবারে প্ল্যান মাফিক এগোই।” -অর্কর কথা শেষ হতেই দুজনে এগিয়ে চলল মাঠের পেছন দিকে।
বটগাছটা পেরিয়ে যেই ওরা আরেকটু এগিয়েছে হঠাৎ করে চারপাশটা অন্ধকার করে ঝোড়ো হাওয়া শুরু হল। অর্ক শায়নের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল, “যাই হয়ে যাক হাত ছাড়বিনা একদম।”
“শায়ন, এই ওঠ। কি রে ঘুমিয়ে পড়েছিল নাকি? আমারও চোখটা কেমন লেগে গিয়েছিল। কি ব্যাপার বলত দুজনেই একসাথে ঘুমিয়ে পড়লাম। এই চল সন্ধ্যে হয়ে গেছে। মা চিন্তা করবে। তারাতারি বাড়ি ফিরতে হবে।” -অর্কর কথায় যেন সম্বিত ফিরে পেল শায়ন।
অর্ক আর শায়ন বাড়ির দিকে এগোতে লাগলো। কিন্তু রাস্তাটা কেমন অন্যরকম। আশেপাশের বাড়িগুলোও তো নেই। অনেক দুরে দুরে দু-একটা বাড়ি। ঐ তো সামনের গলিতেই শায়নের বাড়ি। কিন্তু ওদের বাড়িটা তো নতুন রঙ করেছিল। আর এটা তো টিনের চালের একটা ছোট বাড়ি। শায়নও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “অর্ক এটা তো আমাদের বাড়ি নয়। কিন্তু এখানেই তো আমাদের বাড়ি ছিল। দেখ পাশের বটগাছটাও আছে।”
“হুম, সব কেমন যেন অন্যরকম। রাস্তায় গাড়িও সেরকম নেই। আর দেখ খাবারের দোকান, মোমোর স্টল কিছুই তো নেই। রাতারাতি সব ভ্যানিশ হয়ে গেল কি করে? আচ্ছা চল তো আমার বাড়িতে গিয়ে দেখি ব্যাপারটা কি।”
শায়নকে নিয়ে অর্ক ওদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে মেইন গেটটা বন্ধ। তবে গেটটা লোহার নয়, উঁচু করে টিনের একটা দরজা মতন করা। আস্তে করে গেটটা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখে সামনের মাঠে কয়েকটা বাচ্চা খেলছে।
অর্ক জিগ্যেস করল, “তোমরা কারা? এখানে কি করছ?”
ওদের মধ্যে একজন বলল, “আমরা তো খেলছি। এটা তো আমাদেরই বাড়ি। কিন্তু তুমি কে? কাকে খুঁজছো?
অর্ক খুব অবাক হল। আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তোমার নাম কি?”
ছেলেটা বলল, “আমার নাম শান্তনু আর ও আমার দাদা অতনু।”
“কি? মানে কি বলছ? তোমার বাবার নাম কি?” -অর্ক আবার জানতে চাইলে ছেলেটা বলল, “আমার বাবার নাম দিবাকর সরকার। কিন্তু তুমি কে? এত প্রশ্নই বা করছ কেন?”
অর্ক কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা এটা কোন সাল বলতে পারো? মানে আজ কত তারিখ?”
ছেলেটা হেসে উঠে বলল, “আরে এটাও জান না? আজ তো ২০শে সেপ্টেম্বর,১৯৫২। কাল মহালয়া। দেখছ না সামনের মাঠে পূজোর প্রস্তুতি চলছে।”
এবার অর্কর কাছে সবটা পরিষ্কার। ও শায়নকে বলল, “এখনই খেলার মাঠে ফিরে চল। তারাতারি।”
“কেন রে? কি হল? আর সবকিছু এখানে উল্টোপাল্টা কিকরে হল? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।” -শায়নের প্রশ্নের উত্তরে অর্ক বলল, “যেতে যেতে সব বলছি। চল। আমরা সময়ের অনেক পেছনে চলে এসেছি শায়ন। আমাদের আবার ২০২৪ এ ফিরতে হবে। যে বাচ্চা ছেলেটা আমার সাথে কথা বলল সে আমার ঠাকুরদা। শান্তনু সরকার। আর দিবাকর সরকার আমার ঠাকুরদার বাবা।”
শায়ন আবার জিজ্ঞেস করল, “কি করে এসব হল? আমরা এখানে এলাম কি করে? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।”
অর্ক বলল, “মাঠের পেছনে যখন আমরা গেলাম ঘূর্ণিঝড় এসছিল মনে আছে তোর? তখনই সেখানে একটা টাইম পোর্টাল তৈরি হয়। আর আমরা তার মধ্যে পড়ে যাই। ব্যাস্ তারপর এই ১৯৫২ তে। এখন তারাতারি আবার সেখানে যেতে হবে। আমি পড়েছি যেখানে একবার পোর্টাল তৈরি হয়, সেখানেই আবার পোর্টাল হয়। তাই আমাদের ফিরতে হলে ওখানেই যেতে হবে।”
মাঠের সেই জায়গায় আসতেই আবার ধূলোয় ঢেকে গেল চারপাশ।
অর্ক আর শায়ন একসাথেই চোখ খুলে দেখে ধীরে ধীরে চারপাশটা পরিষ্কার হচ্ছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে প্রায় রাত ন’টা। সামনের রাস্তায় প্রচুর আলো। গাড়ী চলছে। ওরা আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে এগোল।
-লেখা : ব্রততী দাস
কোচবিহার