Suman & Co. -র Suman Adhikari এপিক পাবলিক স্কুলের কচিকাঁচাদের লেখা পড়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে তিনি আমাদের ছাত্রছাত্রীদের নিজের একটি গল্প “ডাক” উপহার পাঠালেন। পড়ে দেখো তো কেমন লাগে?
Hello Epickars,
I am Suman Adhikary , your Suman uncle, a story teller from “Stories With Suman & Co.” “Epic Public School” – এর বাচ্চাদের লেখা আমাকে মুগ্ধ করেছে, তাই আমি আমার একটা গল্প “ডাক” বাচ্চাদেরকে উপহার দিলাম , আমার ধারণা এই গল্পটা তাদের ভালো লাগবে।
“স্যার, নেটওয়ার্ক ঠিক্ হো গেয়া হে, আপ আভি ফোন কর সাকতে হো”..
টেলিফোনের রিসিভারটা তুলে নিলেন সমর, সুতপা নিশ্চয়ই এখনো জেগে আছে।। অপর প্রান্তে রিং হচ্ছে, সুতপার মোবাইলে নতুন কলার টিউন বাজছে “অভি না যাও ছোড় কর, ইয়ে দিল আভি ভরা নেহি”.. পুরো গানটা শেষ না হতে হতেই সুতপা ফোনটা ধরল.. ফোনের আশেপাশেই ছিল মনে হয়। ও প্রান্ত থেকে সুতপা বললো;
“হ্যালো, কিগো আজকে সকাল থেকে কোন ফোন করলে না তো..”
“হ্যাঁ, সময় পাইনি সুতপা, যতবার ফোন করতে গেছি.. ততবারই কিছু না কিছু সিরিয়াস কাজ পড়ে গেছে.. মেয়ে ঠিক আছে?”
ওপ্রান্ত কিছুটা নীরব.. তারপর সুতপা বলে উঠলো –
“হ্যাঁ ঠিকই আছে.. তোমার মেয়ে ইন্টার স্কুল সুইমিং কম্পিটিশনে ফার্স্ট হয়েছে..”
“wow.. that’s made my day.. মেয়ে কোথায়?! ফোনটা দাও না …”
“ঘুমিয়ে পড়েছে গো, সকাল থেকে কম্পিটিশনে খুব ধকল গেছে.. সন্ধ্যা থেকেই তোমাকে জানাবার জন্য খালি জিজ্ঞাসা করছিল,” “বাবা ফোন করেছে? “.. “বাবা ফোন করলে আমাকে একটু দিও তো মা, কথা বলব।”..
এবার সমরের প্রান্তও নীরব হল , কিছু মুহূর্ত পরে সমর বললো –
“congratulations বোলো সুতপা, মেহুলকে বোলো যে, baba is so proud of her & baba loves her..”
“congratulation অবশ্যই বলব। তবে বাকিটা বলতে হবে না সমু, তোমার মেয়ে সেটা ভালো করেই জানে..”
আচ্ছা,বাবার হাঁটুর ব্যথাটা এখন কেমন? টেস্টগুলো হয়েছে?
“বাবা ঠিকই আছেন আগের থেকে, রিপোর্ট এসছে আজ সন্ধ্যেবেলা। সুগার টা এখনো একটু বেশি.. বাকি সব মোটামুটি কন্ট্রোলে.. খালি গাউট- টাই একটু ভোগাচ্ছে, আমি শেষ তিন দিন ধরে বিকেলে ফিজিও- থেরাপিস্টকে দিয়ে সেশন করাচ্ছি.. একটু ইমপ্রুভমেন্টও হয়েছে, এখন ওয়াকার স্টিক নিয়ে বাবা ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে পারছেন..”
“সমর ভাবলো, সত্যিই শেষ কথা বলেছিল বাড়ির সাথে চার দিন আগে.. তারপরে আর কথা বলার সুযোগই পাননি, ওদিকে সুতপা আবার বলছে -“
“শোনো না চিন্তা করো না, আমি এদিকটা সবটা সামলে নেব.. শুধু একটা কথা, তুমি একটু..”
গলাটা যেন বুজে আসে সুতপার.. সমর জানেন যে সুতপা কি বলতে চায়, কিন্তু এর উত্তর যে কি দেবেন সমর, সেটা তিনি নিজেও জানেন না.. সুতপার চোখের জল যে সমর সহ্য করতে পারেন না.. সমর ই তাই গলা খাঁকরে বলে ওঠেন –
“come on সুতপা.. you are such a brave girl, প্লিজ কেঁদোনা.. you are my strength, তুমি আমাকে weak করে দিও না..”
অপর প্রান্ত নিশ্চুপ, কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ থাকার পর সুতপা বলে উঠলো –
“না না.. আমি জানি তোমার কিচ্ছু হবে না.. আর তুমি আমাদের নিয়ে চিন্তা করো না। বাবা, মেহুল, আমরা সবাই ঠিক আছি, ঠিক থাকবো।”
দৃঢ় শোনায় সুতপার গলা.. সমর, বুঝতে পারেন তিনিও ইমোশনাল হয়ে পড়ছেন, তারও চোখ একটু ঝাপসাই হচ্ছে, কিন্তু তিনি জানেন এই অশ্রু আনন্দের, পারস্পরিক বিশ্বাস ও নির্ভরতার। আর কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারেন না সমর.. ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করার পর, কেন যে আর আগের মত ‘love you সুতপা, love you so much..’ বলা যায় না, কে জানে?!.. সমর বললেন,
“ঠিক আছে, রাখছি.. কথা হবে..”
অপরপ্রান্ত হবার নিশ্চুপ, হয়তো অশ্রু রুদ্ধ.. কয়েক মুহূর্ত পরে সুতপার উত্তর আসে..
“হ্যাঁ, সাবধানে থেকো..”

এয়ার চিফ মার্শাল অফ ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স’ সমর বোস, নীরবে রিসিভারটা ধরে বসে রইলেন.. বলা হলো না সুতপা কে, যে আজ আর মাত্র দু ঘন্টা পরে, তাকে মিশনে যেতে হবে.. প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জঙ্গি ঘাঁটি গুলোতে অতর্কিত হামলা করতে হবে.. যেমন অতর্কিত হামলা তারা করেছিল কিছুদিন আগে ভারতের নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের উপরে.. হাতে আর মাত্র কিছুটা সময়, তারপর বের হতে হবে মিশন -এ। নিজের পার্সোনাল একটা ছোট ব্যাগ পার করে সমর, এই ব্যাগটা সবসময় কাছে থাকে তার.. ব্যাগের একটা চেন থেকে করে নিয়ে আসে একটা ছোট্ট কাঠের বাক্স, সেখান থেকে একটা কাগজ আর পেন নেয় সমর.. কয়েকটা কথা এখনই তার খুব লিখতে ইচ্ছা করছে, তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় একটা চিঠি লেখার.. এটা তার ৩০ তম চিঠি, এর আগের বাকি ২৯টা চিঠিও এই বাক্সের মধ্যেই আছে, পোস্ট করা হয়নি.. চিঠিটা লিখতে শুরু করে সমর –

Dear Sutapa,
কিছুক্ষণ আগেই তোমার সাথে ফোনে কথা বললাম, কিন্তু অনেক কথাই বলা হলো না জানো তো। এ মনের কথাগুলো একটা চিঠিতে ছোট্ট করে লিখে গেলাম। বিশ্বাস করো আমি চাইনা এই চিঠিটা তোমার হাতে পড়ুক, কারণ এই চিঠিটা শুধুমাত্র সেই সময়ই তোমার হাতে পড়বে, যদি আমি না থাকি। যাক গে প্রথমেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা যাক –
সুতপা তুমি তো জানোই মেহুল আমাদের প্রাণ। মেয়েটা পড়াশোনার পাশাপাশি স্পোর্টস টাও যেন ভালো করে করে, ছেড়ে যাতে না দেয়, এটা তুমি দেখো। মেয়ে পরবর্তীকালে কি করবে কি কেরিয়ার অপশন বাছবে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার, এই ব্যাপারে কোন কিছু মেয়ের উপর চাপিয়ে দেওয়ার আমি বিরোধী। কিন্তু তুমি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করো সুতপা, যে মেয়ে কি করলে আমি সব থেকে বেশি আনন্দ পাব, তাহলে আমার উত্তর হবে “দেশের সেবা “, সেটা যেভাবেই হোক না কেন। জানো তো সুতপা, আমি অন্য বাবাদের মত মেয়েকে রাত্রে গল্প বলে ঘুম পাড়াতে পারিনা, স্কুল থেকে আনতে যেতে পারি না, জন্মদিনেও প্রত্যেক বছর সাথে থাকতে পারিনা। জানি মেয়ের হয়তো অনেক অভিমান হয় আমার ওপর, কিন্তু সেই অভিমানও কখনো আমাকে প্রকাশ করে না, কারণ এই ছোট্ট বয়সেও ও বুঝে গেছে যে বাবা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে দেশের জন্য। এই অল্প বয়সেও কত বুঝদার, কোনদিন বলিনি আজ বলছি, আমি না থাকলেও আমাদের মেয়েকে এত সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার কৃতিত্ব শুধুই মেহুলের মায়ের; তোমার সুতপা। এবার আসি বাবার কথায়, রিটায়ার্ড ফুটবল “কোচ স্যার” তো তোমাকে বৌমা ভাবেন না, মেয়েই ভাবেন। ছেলের কথায় পাত্তা তো তিনি দেবেন না, তার জন্য তোমার শাসনই যথেষ্ট। আর বাবার ফিজিও থেরাপি তুমি নিজে থেকেই করাবে সেটা আমি জানি, আসলে স্পোর্টসম্যান বাবা, বাতের ব্যথায় পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে এটা আমার মানতে কষ্ট হয়। খালি একটু দেখে নিও, মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে ভব ময়রার দোকান থেকে কালাকাঁদ খাবার অভ্যাস আছে কিন্তু, আমি জানি কারন একদিন আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিল, তোমাকে বলতে বারণ করেছিল। আমি তোমাকে বলিনি সুতপা, বাবার বয়স হয়েছে, মিষ্টি খেতেই তো একটু ভালোবাসে, সেটাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে কষ্ট পাবে। এই কথাগুলো কেন বলছি কারণ একটা মিশনে যাচ্ছি, বলতে পারিনি তোমায়, কিন্তু আমি জানি, তুমি আন্দাজ করতে পেরেছ। জানো তো সুতপা, ১৪ বছর আগে যখন মা দুরারোগ্য ক্যান্সারে চলে যায়, তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম কিন্তু এক ফোঁটা চোখের জল ফেলিনি। আসলে ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে যখন হাত পায়ে চোট লাগতো বা খেলার মাঠে মারপিট হতো, আমি বাড়ি এসে কান্নাকাটি করতাম আর বলতাম আমি পরের দিন খেলতে যাবো না। মা আমাকে বলতো – “বাবু, খেলতে গিয়ে এরকম কত চোট লাগবে, জীবনেও কত ধাক্কা লাগবে, কিন্তু হাল ছাড়লে হবে! হাল ছাড়বি না বাবু, চোখের জল বিফলে দিস না..”। তাই মায়ের শেষ যাত্রার সময় বাবা কাঁধে হাত রেখে বলেছিল – “চেষ্টা র তো ত্রুটি রাখিস নি, শেষ পর্যন্ত লড়েছিস, তোর মা-ও অনেক লড়াই করেছে.. “। তাই লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে পারবো না সুতপা, এই আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদেরকে বেরোতে হবে, কিছুদিন আগে কয়েকজন সন্ত্রাসবাদীর জিহাদের বলি হতে হয়েছিল সাধারণ নিরীহ ভারতবাসীদেরকে, যারা পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল, আনন্দ করতে গিয়েছিল। সুতপা, আমি ওই নিরীহ মানুষগুলোর মৃতদেহের মধ্যে নিজেদেরকে দেখেছি, এরকম তো আমরাও কাশ্মীর ঘুরতে গিয়েছিলাম, তুমি- আমি- মেহুল.. আমরাও তো সাধারণ মানুষের মতো গিয়েছিলাম.. আনন্দ করতে গিয়েছিলাম.. কিন্তু কিছু শয়তান, কাপুরুষ, নরকের কীটের ধর্মের নামে ভড়ঙের বলি হতে হয়েছে আজ এই সাধারণ প্রাণ গুলোকে। আজ আমাদের মিশন, কিছুক্ষণের মধ্যে বেরোবো আমরা, ওই সন্ত্রাসবাদীদের কয়েকটা ঘাঁটি-কে গুঁড়িয়ে দিতে.. জানো তো সুতপা, মায়ের যখন ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দিতে হচ্ছে তখন ডাক্তার বাবু বলেছিলেন কেমোথেরাপিতে শুধুমাত্র ম্যালিগন্যান্ট সেল ধ্বংস হয় না, শরীরের ভালো কোষও কিছুটা ধ্বংস হয়। আজ যখন আমরা অ্যাটাক করব, তখন সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটির সাথে সাথে কিছু সাধারণ মানুষের নিরীহ প্রাণও যাবে.. কিন্তু কি করবো বলো যে যুদ্ধের যে নিয়ম, ওই অনেকটা কেমোথেরাপীর মত.. যাক অনেকটা লিখে ফেললাম, আর সময় নেই বিশেষ, এবার বেরোতে হবে। শেষে কয়েকটা কথা বলি, যেটা ১৩ বছরেও বলতে পারিনি.. যেভাবে তুমি বাবাকে, মেয়েকে সর্বোপরি তোমার বাবা- মাকেও ভালো রেখেছো তাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ সুতপা, এই ১৩ বছরে খুব কম সময় আমি তোমাদের পাশে ছিলাম, কিন্তু আমার না থাকাতেও তুমি কর্তব্য থেকে বিরত থাকোনি এবং বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও থাকবে না। যে অনিশ্চয়তার কথা ভেবে তুমি প্রতি রাত্রে ঘুমোতে যাও, তার জন্য সাহস লাগে সুতপা। So thank you captain.. হ্যাঁ তুমিই আমাদের পরিবারের ক্যাপ্টেন। তাহলে এবার যাই সুতপা.. আমার মাকে তো ক্যান্সার নামক রাক্ষসের বিরুদ্ধে জেতাতে পারিনি, লড়াই করেছিলাম.. কিন্তু এবার আমার দেশ- মা কে জেতাতে হবে সুতপা, শেষ রক্তবিন্দু অব্দি লড়াই করতে চাই.. শুধু আমি একা নয় আমার সব দেশোয়ালই জওয়ান ভাই-বোন রা এবং আমাদের ১৩০ কোটি ভারতবাসী মিলে যুদ্ধ করবো, আর আমরা জিতবোই সুতপা।।
বাবাকে আমার প্রণাম দিও
মেয়েকে অনেক অনেক আদর
তোমার বাবা মা কেও আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম
with loads of love, Samar
চিঠি শেষ করে, সমর নিজের একজন অধস্তনকে ডেকে বলে, “মেরা বাহন রেডি হ্যা না?!.. “
অধস্তন কর্মীটি বলেন “হাঁ স্যার, আপকা ‘টিকলি’ রেডি হ্যা.. দুশমন কা খাতমা কারেঙ্গে স্যার.. জয় হিন্দ.. “
জয় হিন্দ..
‘টিকলি’, সমরের রাফাল বিমান, যার নাম সে রেখেছে তার মায়ের নামে..
চিঠিটা বক্সে রেখে, বাক্স থেকে দুটি ছবি বার করেন সমর, একটি ছবিতে মেহুল- সুতপা-বাবা, আরেকটি ছবিতে সে আর তার মা। ছবিগুলোতে একবার হাত বুলিয়ে, আবার ছবিগুলো যথাস্থানে রাখে সে, ব্যাগ বন্ধ করে এবার দ্রুত উঠে পড়ে.. নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটতে থাকে টার্মিনাসের দিকে, টার্মিনাসের মুখে এসে আকাশের দিকে চোখ যায় সমরের.. রাতের আকাশে তারা ঝকমক করছে.. আর টারমিনাসের মাঝখানে পত পত করে উড়ছে ভারতের তিরঙ্গা.. দৃঢ় পদক্ষেপে “এয়ার চিফ মার্শাল অফ ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স” সমর বোস হাঁটতে থাকেন তার বিমান ‘টিকলি’র দিকে..

Dear Students
Meet Suman Adhikari the founder of Stories With Suman & Co. He stays in Shyamnagar, West Bengal. Having keen interest in literature, books, cinema, drama, sports & food Suman is a wonderful story teller who writes and even makes movies and documentaries.